ViralNews24

ViralNews24

যুদ্ধে নতুন মোড়, বড় ঝুঁকির মুখে গোটা বিশ্ব

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখন এক অনিশ্চিত মোড়ে পৌঁছেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টাহামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে। সাতদিন ধরে চলমান এই সংঘাতে উভয়পক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরায়েল। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন কৌশলগত ও জনবহুল এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পরাশক্তিগুলোর ভূমিকা এখন বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আজ যুক্তরাজ্যের কিছু সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বড় করে প্রকাশিত হয়েছে।

ডেইলি টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘তার অবস্থান কিছুটা নরম করছেন বলে মনে হচ্ছে।’ কারণ তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে কি না- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি আরও দুই সপ্তাহ সময় নেবেন।’ অর্থাৎ ‘আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তিনি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, এই দুই সপ্তাহের সময়সীমা ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আলোচনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস’ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহ “স্থগিত” করাকে ‘ধ্বংসের কিনারা থেকে এক ধাপ পিছিয়ে আসা’ বলে বর্ণনা করেছে।

পত্রিকাটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন একটি ‘বেরিয়ে যাওয়ার পথ’ খুঁজছেন। কারণ তার উপদেষ্টারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলো ইরানের হামলার টার্গেট হতে পারে।

এদিকে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত বহু দশক ধরে চলা বৈরিতার ফল। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে পর্যন্ত ইরান ও ইসরাইল ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, যাদের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক ছিল।

বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ক্ষমতায় আসে একটি শিয়া মুসলিম সরকার, তীব্রভাবে পশ্চিমা দেশ ও ইসরাইলবিরোধিতাই যাদের আদর্শ।

সদ্য নিয়োগ পাওয়া সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির অধীনে থাকা ইরান, সে সময় ইসরাইলের অস্তিত্ব স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং একে নিপীড়ন ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়।

ইরানের নতুন শাসনব্যবস্থা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানায় এবং হেজবুল্লাহ (লেবানন), হামাস (গাজা) ও হুথি (ইয়েমেন)-এর মতো ইসরাইলবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়।

ইসরাইল তাদের দিক থেকে ইরানকে বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক বলে অভিযুক্ত করে আসছে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক তৎপরতা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে মিলে নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে আসছে।

তারা বহু বছর ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপন অভিযান চালিয়েছে, যা ছিল দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘ এক ‘ছায়াযুদ্ধ’ যা পরে প্রকাশ্যে আসে।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে আর কেবল আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা নেই- বরং এটি ধীরে ধীরে একটি বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে। ফলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক ও কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ। যাতে এই সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যায় এবং বিশ্বের আরও একটি যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *