বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। লাখ লাখ মানুষ পরিবারকে সচ্ছলতা দিতে পাড়ি দেন হাজার হাজার মাইল দূরের অচেনা দেশে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পরিবার থেকে দূরে থেকে রেমিট্যান্স পাঠান ঘামে ভেজা টাকায়। অথচ দেশে থাকা স্ত্রীদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়! প্রশ্ন ওঠে—কেন ঘটছে এমনটা? দোষ কাদের? সমাধানই বা কী?ফ্যামিলি ট্যুর প্যাকেজ
সমস্যার মূল: শূন্যতা, একাকীত্ব ও অবহেলাসমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, অনেক প্রবাসীর স্ত্রী মানসিকভাবে দীর্ঘ সময় একা থাকেন। স্বামীরা বছরের পর বছর দেশে ফিরতে পারেন না। এ সময়টিতে তাদের দৈনন্দিন জীবনে ভর করে একাকীত্ব, নিরাপত্তাহীনতা ও শারীরিক চাহিদার অপূর্ণতা।
“মেয়েরা মানুষ, রোবট নয়। স্বামীর সঙ্গ না থাকলে মনের জোর দিয়ে কতদিন?” — এমন কথাই বলছিলেন ঢাকার কাউন্সেলিং থেরাপিস্ট রাবেয়া তাসনিম।
একমাত্র সন্তান কিংবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানোয় মন ভরে না অনেক নারীর। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোতে পরিচয় হয় নতুন কারও সঙ্গে। দিনের পর দিন কথা, তারপর দেখা—এরপর সম্পর্ক গড়ায় শারীরিক ঘনিষ্ঠতায়।
বাস্তব উদাহরণ: রংপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্তমেহেরপুর: স্বামী ওমানে, স্ত্রী জড়িয়ে পড়ে পাশের বাড়ির এক দোকানদারের সঙ্গে। স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে—শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স।
নোয়াখালী: স্বামী কুয়েতে ৫ বছর। স্ত্রী স্কুলশিক্ষক। প্রাইভেট টিউশন দিতে গিয়ে এক অভিভাবকের সঙ্গে গড়ে ওঠে সম্পর্ক।
সিলেট: প্রবাসীর স্ত্রী গোপনে বিয়ে করেন আরেকজনকে। স্বামী দেশে ফিরে এসে স্ত্রীর সংসার ভাঙার খবর পান—অভিমানে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু।
সমাজ ও সংসারে এর প্রভাব কী?পরকীয়ার কারণে নষ্ট হয় পরিবার, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় সন্তানরা। ডিভোর্স বাড়ে, আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন সেই প্রবাসী স্বামী, যিনি দিনরাত শ্রম দিয়ে সংসার চালান বিদেশের মাটিতে।
কারা দায়ী? শুধু স্ত্রী নয়, স্বামীরাও?বিশ্লেষকদের মতে, দায় একতরফা নয়। অনেকে বিদেশে গিয়ে স্ত্রীর খবর না রাখেন, ফোনে কথা বলেন না ঠিকমতো, অনেকেই আর্থিক সহায়তা দিলেও মানসিক বন্ধন তৈরি করেন না। আবার অনেকে বিয়ের পরপরই স্ত্রীকে রেখে বিদেশ চলে যান—যেখানে আবেগ তৈরি হবার আগেই বিচ্ছিন্নতা আসে।
সমাধান কী হতে পারে?নিয়মিত যোগাযোগ: ভিডিও কল, মেসেজ, উপহার পাঠানো—মানসিক বন্ধন বাড়ায়।
দ্রুত ছুটি ও দেশে ফেরা: বছরে অন্তত একবার দেশে ফেরা উচিত।
সন্তান থাকলে মায়া বাড়ে: যৌথ সংসার ও সন্তান অনেক সময় পরকীয়া থেকে বিরত রাখে।
শিক্ষা ও সচেতনতা: নারীরাও যদি বুঝে যে প্রবাসে থাকা স্বামীর ওপর পুরো পরিবারের দায়িত্ব, তবে তারা সহজে এমন সম্পর্কে জড়াবেন না।
পারিবারিক নজরদারি: পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত এই সম্পর্কগুলো সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করা।
সতর্ক বার্তা সমাজের জন্যপ্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির রক্ষাকবচ। তাদের আত্মত্যাগের মূল্য দিতে হবে সামাজিকভাবে। শুধু স্ত্রীদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন নয়, আমাদের সমাজ, আত্মীয়স্বজন ও পরিবারকেও এগিয়ে আসতে হবে।
শেষ কথা:প্রেম, সম্পর্ক কিংবা পরকীয়া—সবই ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও এর অভিঘাত পড়ে পুরো পরিবার, সমাজ ও অর্থনীতিতে। প্রবাসীদের আত্মত্যাগ যেন অন্ধকারে ঢাকা না পড়ে, সে বিষয়ে সবারই সচেতন হওয়া জরুরি।
Leave a Reply