ViralNews24

ViralNews24

বাড়ির কেয়ারটেকার দেন রাতের খাবার, সকালে মেলে ৩ লাশ

শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে নাইম হোসেনের চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন ও তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার। শনিবার রাজধানীর মগবাজারে একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন তারা।

ওই রাতে খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনজনই। বিষয়টি এক আত্মীয়কে জানান তারা। কিন্তু রোববার (২৯ জুন) সকালে তাদের নিথর দেহ পাওয়া যায়। দুপুরে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, খাবারের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটি সন্দেহজনক। তাই রফিকুল ইসলাম নামে নিহত মনিরের বাড়ি-গাড়ির কেয়ারটেকার হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

হোটেল ওঠা ও রাতের খাবার

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনির হোসেনের ঢাকার পোস্তগোলা এলাকায় একটি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে। পাশাপাশি হাইওয়ে রুটে চলাচল করা কয়েকটি বাসও রয়েছে তার মালিকানায়। এসব দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন রফিকুল ইসলাম। শনিবার সকালে চিকিৎসার জন্য পরিবারটি ঢাকায় আসে। দুপুরে রফিকুলকে সঙ্গে নিয়েই মগবাজারের ‘সুইট স্লিপ’ হোটেলে ওঠেন মনির। রাতে পাশের একটি হোটেল থেকে খাবার এনে খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন মনির, তার স্ত্রী ও ছেলে।

হোটেল সূত্র ও সিসিটিভির তথ্য

সুইট স্লিপ হোটেলের সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রফিকুল ইসলাম নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রুম ভাড়া নেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সন্ধ্যায় একটি ব্যাগে খাবার নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন রফিকুল। পরে তিনি চলে যান। রাত ৮টার দিকে মনির হোসেন নিচে নেমে পানি নিয়ে ওপরে নিজের কক্ষে ফেরেন। তারা অসুস্থ হলেও হোটেল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানাননি।

রোববার বেলা ১১টার দিকে রফিকুল তার মেয়েকে নিয়ে হোটেলে ফিরে আসেন। প্রথমে স্বপ্না আক্তারকে নিয়ে পাশের আদ-দ্বীন হাসপাতালে যান তিনি। আধা ঘণ্টা পর নিয়ে যান মনির হোসেনকে। এরপর রুম থেকে রফিকুলের মেয়ের চিৎকার শুনে হোটেল কর্মীরা ছুটে এসে নাইমকে অচেতন অবস্থায় দেখে হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতাল ও মরদেহ হস্তান্তর

আদ-দ্বীন হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে আনার আগেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। পরে পুলিশ লাশ তিনটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

পরিবারের অভিযোগ ও পরিচয়

নিহত মনির হোসেনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে। তিনি তিন সন্তানের বাবা। বড় ছেলে নাইম শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী। বাকি দুই ছেলে ১৪ ও ৯ বছর বয়সী। তারা গ্রামের বাড়িতে রয়েছে। মনিরের স্ত্রীর খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

মনিরের চাচাতো ভাই মো. জাকির হোসেন জানান, ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছিলেন মনির। নিয়মিতই বড় ছেলেকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসতেন। শনিবার সকালেও একই উদ্দেশ্যে পরিবারসহ ঢাকায় আসেন। কিন্তু চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ায় হোটেলে ওঠেন। রোববার বিকেলে গ্রাম থেকে ফোন পেয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে হাসপাতালে তিনজনের মরদেহ দেখতে পান তিনি।

পুলিশের তদন্ত

রোববার রাত ৯টার দিকে রমনা থানা পুলিশ মরদেহগুলো মর্গে পাঠায়। পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাটি সন্দেহজনক। এটি সাধারণ ফুড পয়জনিং মনে হচ্ছে না। খাবারে কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। ময়নাতদন্ত ও আলামত পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলামসহ হোটেল সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রফিকুল প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, তিনি মনিরকে সঙ্গে নিয়ে খাবার কিনেছিলেন। কিন্তু সিসিটিভিতে দেখা গেছে, রফিকুল একাই খাবার নিয়ে হোটেলে ঢুকছেন। সব বিষয় মিলিয়ে তদন্ত চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *