ViralNews24

ViralNews24

গোপালগঞ্জের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানা গেল

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার গোপালগঞ্জে দিনভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও রক্তক্ষয়ী সহিংসতা হয়। এতে অন্তত ৪ জন নিহত হন, আহত হন বহু মানুষ। রাত ৮টা থেকে পুরো জেলায় কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। এখনও চলছে সেই কারফিউ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, কারফিউ জারির পর থেকে গোপালগঞ্জের রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য। সব দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় কেবল দু-একটি রিকশা চলতে দেখা গেছে।

“রাত ১২টায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময়ও শহর ছিল সুনসান। কিছু রিকশা ও দু-একটি খাবারের দোকান ছাড়া সবকিছু বন্ধ ছিল,” বিবিসিকে জানান এক স্থানীয় সাংবাদিক।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা:

বিবিসি বাংলাকে গোপালগঞ্জ সদর সার্কেলের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে, তবে থমথমে। কারফিউ বলবৎ রয়েছে।”

তিনি জানান, গতকাল সন্ধ্যা থেকেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ ও র‍্যাব বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি।

কী ঘটেছিল গতকাল:

মাসব্যাপী ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপি গতকাল গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় সমাবেশ আহ্বান করে। তবে দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশস্থলে হামলা হয়। এনসিপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সভামঞ্চে ভাঙচুর চালিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও হামলা চালান।

পাল্টা প্রতিরোধে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং দুপুর ২টায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

তবে সমাবেশ শেষে গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে আবারও হামলার মুখে পড়ে তাদের গাড়িবহর। এতে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছোড়ে।

পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে আসে। তাদের ওপরও হামলা হয়, ফলে সেনাসদস্যরা ফাঁকা গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে সেনা-পুলিশের কঠোর পাহারায় শহর ত্যাগ করেন তারা।

সরকারি পদক্ষেপ ও হতাহতের তথ্য:

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। পরে তা পরিবর্তন করে রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করা হয়।

ঘটনার পর গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস জানান, অন্তত চারজনের মরদেহ হাসপাতালে এসেছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিবিসিকে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কোনও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেনি।

বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

ঘটনার প্রতিবাদে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠন ঢাকার শাহবাগ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও অন্যান্য জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করে। শাহবাগে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

আজ বৃহস্পতিবারও এনসিপি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে, গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। এক বিবৃতিতে দলটি দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।

অন্যদিকে, সরকার জানিয়েছে, “হামলাকারীদের বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া হবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *